,

ধর্ম নিয়ে কটূক্তি! আর না-আর না ॥ করলেই ১৪ বছরের জেল

সময় ডেস্ক ॥ আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করে ওয়েব সাইট বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসের মাধ্যমে প্রচার করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ২০০৬ সালের ৫৭ ধারা অনুসারে অপরাধ প্রমাণিত হলে ১৪ বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ডেদন্ডিত হতে পারে।’ ব্লগার নীলাদ্রি চক্রবর্তী (নিলয় নীল) হত্যাকান্ডের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে- হত্যাকারীদের নিজ হাতে আইন না তুলে না নেওয়ার জন্য। একইসঙ্গে ব্লগারদের সীমা লঙ্ঘন না করতেও আহ্বান জানানো হচ্ছে। ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কটূক্তির এ অভিযোগ তুলে ধর্মান্ধ উগ্রগোষ্ঠী ব্লগারদের হত্যা করছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এটাও বলা হচ্ছে ব্লগার হত্যাকারী ও ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আইন বিশেজ্ঞদের মতে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির শাস্তির চেয়ে ব্লগার হত্যাকারীর শাস্তি বেশি। তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুসারে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে তা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর অথবা ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড। দন্ড বিধি অনুসারে এর শাস্তি ১ থেকে ২ বছর হতে পারে। অপরদিকে যারা ব্লগার হত্যা করবে অথবা হত্যার সাথে জড়িত থাকবে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের চেয়ে হত্যা মামলার শাস্তি অনেক বেশি।’ আব্দুল্লাহ আবু আরও বলেন, ‘যারা ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করে দন্ড বিধি ২৯৫-ক অনুসারে তাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে।’ যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তবে দন্ড বিধি ২৯৮ ধারা অনুসারে তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে। পাবলিক প্রসিকিউর আরও বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে হত্যা করে তবে দন্ড বিধি ৩০২ ধারা অনুসারে অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে। আর যারা হত্যার সাথে জডিত থাকবেন দন্ড বিধি ৩৪ ধারা অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের একই শাস্তি হতে পারে।’ রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা ব্লগারদের হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং যারা হযরত মুহাম্মদ (সা:) ধর্ম ও কোরআন নিয়ে যুক্তিহীনভাবে আঘাত করে ব্লগে লেখে তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ যারা যুক্তিহীনভাবে ধর্ম নিয়ে ব্লগে লেখে তারাও উগ্রবাদী।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকান্ডের সঙ্গে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কোনো দল জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ করছে ডিবি। মামলা হস্তান্তরের পর সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিবি কর্মকর্তারা। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকান্ডের সময় নিলয়ের একটি ল্যাপটপ ও সিম্ফোনি মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। নিজস্ব গুপ্তচর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় এগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি আনসার আল ইসলামের ই-মেইল ও ফেসবুক আইডি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’ বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতরে গত রবিবার বিকেল ব্লগার ও শিশু হত্যা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, হত্যাকারীদের আইন নিজ হাতে তুলে না নেওয়া এবং মুক্তমনা ব্লগারদের সীমালক্সঘন না করার অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, ব্লগারেরা ব্লগে লিখতে পারেন, কিন্তু এমন কোন কিছু লেখা ঠিক নয় যাতে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগে। ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়া আইন অনুযায়ী অপরাধ। আইজিপি বলেন, ব্লগারদের হত্যা করে কেউ পার পাবে না। কোনো লেখায় কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে তিনি আইনের সহায়তা নিতে পারেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিকভাবে ১৪ বছরে জেলের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। মামলা দেয়া হলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তিনি আইন হাতে তুলে না নিয়ে, সমাজে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য সকল সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসার আহবান জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর